ঢাকা ১০:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অসম আচরণের কোনো মানে হয় না

ব্রহ্মা চেলানি (‌‌নিক্কি এশিয়ায় প্রকাশিত কলামের অনুবাদ) 

 

পাকিস্তানে গণ-গ্রেফতার, গুম ও নির্যাতন রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে অঘোষিত সামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলন হওয়ার পরও দেশটির প্রতি নীরব ভূমিকা পালন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ গণতন্ত্র চর্চার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাডেন প্রশাসন। বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?

অল্প কথায় বলতে গেলে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচারের নাম দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে নির্বাচনী ও ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব খাটিয়ে আসছে। এভাবে গণতন্ত্র প্রচারের নাম করে নিষেধাজ্ঞাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন আরও দুটি বিষয়কে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে। এক. অনেক বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনে বাস করেন যাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলের আমেরিকান গ্রিন কার্ড রয়েছে। দুই. পশ্চিমে বাংলাদেশের যে রফতানি হয় তার সিংহভাগই যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য স্পষ্ট করেছেন এন্টনি ব্লিঙ্কেন। এগুলোতে কারও তেমন আপত্তি থাকার কথা না। যেমন: তারা চায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। যাইহোক, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ি বা জড়িত’ ব্যক্তিদের ভিসা বন্ধ করার হুমকি তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে খুব কমই সহায়ক। তাদের সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় ভুল প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের কৌশল অনুসরণ করছে। তারা গণতন্ত্রের নাম দিয়ে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার চালু করার চেষ্টা করছে। এরকম হলে সত্যিকার অর্থে কোনো গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি একটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ হবে।

২০০৯ সাল থেকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে যেখানে পাকিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিরাজ করছে। তারপরেও ২০২১ সালসহ এই বছরের শুরুতে বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’ থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে দুই বারই পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা এতে যোগ দেয়নি।

স্বল্পমেয়াদী ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর ছয়জন বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টিকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সমস্ত সম্পদ জব্দ করেছে।

বিএনপি দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল এবং কট্টরপন্থী ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট করার পরও ডিসেম্বরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশ পুলিশ সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের অভিযোগ আনেন। সম্প্রতি, ব্লিঙ্কেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনকে গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ভয় দেখানোর বিষয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন।

ব্লিঙ্কেনের ভিসা-নিষেধাজ্ঞার কৌশলটি স্পষ্টতই শেখ হাসিনা সরকারের সদস্যদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে। যার মধ্যে আইন প্রয়োগকারী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়েছেন। যদিও নতুন নীতির ঘোষণায় বিরোধী দলের সদস্যদেরও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কূটনীতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিদেশী কর্মকর্তাদের অনুমোদন সাধারণত প্রতীকী উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু করে না। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতও হতে পারে।

এই মাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এবং চীনের জেনারেল লি শংফুর মধ্যে সিঙ্গাপুরে বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটনের অনুরোধ জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করে বেইজিং। লি’কে মার্চ মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পাঁচ বছর আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখা হয়েছিল বলে এক বিবৃতিতে জানায় চীন।

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা হিতে বিপরীত হওয়ার আরেকটা প্রমাণ হলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা। ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ মিন অং হ্লাইং সহ অন্য তিনজন সিনিয়র কমান্ডারের বিরুদ্ধে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশটির বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভ্যুত্থানে অবদান রেখেছিল। কারণ জেনারেলরা মনে করেছিলেন যে, এ নিষেধাজ্ঞায় তাদের ব্যক্তিগতভাবে সমস্যার কিছুই নেই। তারপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা দেশটিকে এখন আরও চীনের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।

শুধু তাই নয়, মিয়ানমার ও ইরান থেকে বেলারুশ ও কিউবা পর্যন্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকান প্রভাবের আপেক্ষিক পতন এবং পশ্চিম থেকে প্রাচ্যে বৈশ্বিক ক্ষমতার চলমান পরিবর্তন মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞাকে অকার্যকর করে তুলছে। যাইহোক, পশ্চিমারা এখনও বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ডলার বিশ্বের প্রাথমিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে রয়ে গেছে। তাই নিষেধাজ্ঞা এখনও আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের সপ্তম জনবহুল দেশকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দোহাই দিয়ে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র্র। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়াার জন্য বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ তাদের জীবন দিয়েছিলেন। তখনও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সহয়তা করার জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে সে বেদনাদায়ক স্মৃতি নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা করছে আমেরিকা। প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটন কী চায়?

(লেখক: নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের কৌশলগত অধ্যয়নের প্রফেসর ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপদেষ্টা। ‘ওয়াটার: এশিয়াস নিউ ব্যাটলগ্রাউন্ড’ সহ নয়টি বইয়ের লেখক তিনি। অনুবাদটি ১৩ জুন সময় আলোতে প্রকাশিত হয়। এখনই সময় এর পাঠকদের জন্য লেখাটি কিঞ্চিৎ সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশ করা হলো।)

মন্তব্য লিখুন

জনপ্রিয় লেখা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অসম আচরণের কোনো মানে হয় না

আপডেটের সময় ১০:২১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

ব্রহ্মা চেলানি (‌‌নিক্কি এশিয়ায় প্রকাশিত কলামের অনুবাদ) 

 

পাকিস্তানে গণ-গ্রেফতার, গুম ও নির্যাতন রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে অঘোষিত সামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলন হওয়ার পরও দেশটির প্রতি নীরব ভূমিকা পালন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ গণতন্ত্র চর্চার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাডেন প্রশাসন। বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?

অল্প কথায় বলতে গেলে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচারের নাম দিয়ে দীর্ঘকাল ধরে নির্বাচনী ও ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব খাটিয়ে আসছে। এভাবে গণতন্ত্র প্রচারের নাম করে নিষেধাজ্ঞাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন আরও দুটি বিষয়কে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে। এক. অনেক বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনে বাস করেন যাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলের আমেরিকান গ্রিন কার্ড রয়েছে। দুই. পশ্চিমে বাংলাদেশের যে রফতানি হয় তার সিংহভাগই যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য স্পষ্ট করেছেন এন্টনি ব্লিঙ্কেন। এগুলোতে কারও তেমন আপত্তি থাকার কথা না। যেমন: তারা চায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। যাইহোক, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ি বা জড়িত’ ব্যক্তিদের ভিসা বন্ধ করার হুমকি তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে খুব কমই সহায়ক। তাদের সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় ভুল প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের কৌশল অনুসরণ করছে। তারা গণতন্ত্রের নাম দিয়ে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার চালু করার চেষ্টা করছে। এরকম হলে সত্যিকার অর্থে কোনো গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি একটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ হবে।

২০০৯ সাল থেকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে যেখানে পাকিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিরাজ করছে। তারপরেও ২০২১ সালসহ এই বছরের শুরুতে বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’ থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে দুই বারই পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা এতে যোগ দেয়নি।

স্বল্পমেয়াদী ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর ছয়জন বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টিকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সমস্ত সম্পদ জব্দ করেছে।

বিএনপি দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল এবং কট্টরপন্থী ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট করার পরও ডিসেম্বরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশ পুলিশ সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের অভিযোগ আনেন। সম্প্রতি, ব্লিঙ্কেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনকে গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ভয় দেখানোর বিষয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন।

ব্লিঙ্কেনের ভিসা-নিষেধাজ্ঞার কৌশলটি স্পষ্টতই শেখ হাসিনা সরকারের সদস্যদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে। যার মধ্যে আইন প্রয়োগকারী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়েছেন। যদিও নতুন নীতির ঘোষণায় বিরোধী দলের সদস্যদেরও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কূটনীতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিদেশী কর্মকর্তাদের অনুমোদন সাধারণত প্রতীকী উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু করে না। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতও হতে পারে।

এই মাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এবং চীনের জেনারেল লি শংফুর মধ্যে সিঙ্গাপুরে বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটনের অনুরোধ জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করে বেইজিং। লি’কে মার্চ মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পাঁচ বছর আগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখা হয়েছিল বলে এক বিবৃতিতে জানায় চীন।

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা হিতে বিপরীত হওয়ার আরেকটা প্রমাণ হলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা। ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ মিন অং হ্লাইং সহ অন্য তিনজন সিনিয়র কমান্ডারের বিরুদ্ধে দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশটির বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভ্যুত্থানে অবদান রেখেছিল। কারণ জেনারেলরা মনে করেছিলেন যে, এ নিষেধাজ্ঞায় তাদের ব্যক্তিগতভাবে সমস্যার কিছুই নেই। তারপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা দেশটিকে এখন আরও চীনের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।

শুধু তাই নয়, মিয়ানমার ও ইরান থেকে বেলারুশ ও কিউবা পর্যন্ত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকান প্রভাবের আপেক্ষিক পতন এবং পশ্চিম থেকে প্রাচ্যে বৈশ্বিক ক্ষমতার চলমান পরিবর্তন মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞাকে অকার্যকর করে তুলছে। যাইহোক, পশ্চিমারা এখনও বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ডলার বিশ্বের প্রাথমিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে রয়ে গেছে। তাই নিষেধাজ্ঞা এখনও আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের সপ্তম জনবহুল দেশকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দোহাই দিয়ে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র্র। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়াার জন্য বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ তাদের জীবন দিয়েছিলেন। তখনও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সহয়তা করার জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে সে বেদনাদায়ক স্মৃতি নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা করছে আমেরিকা। প্রকৃতপক্ষে ওয়াশিংটন কী চায়?

(লেখক: নয়াদিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের কৌশলগত অধ্যয়নের প্রফেসর ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপদেষ্টা। ‘ওয়াটার: এশিয়াস নিউ ব্যাটলগ্রাউন্ড’ সহ নয়টি বইয়ের লেখক তিনি। অনুবাদটি ১৩ জুন সময় আলোতে প্রকাশিত হয়। এখনই সময় এর পাঠকদের জন্য লেখাটি কিঞ্চিৎ সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশ করা হলো।)